বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস প্রধানত তিনটি যুগে বিভক্ত-
- আদিযুগ বা প্রাচীন যুগ (আনুমানিক ৬৫০ খ্রি. মতান্তরে ৯৫০ খ্রি.–১২০০ খ্রি.)
- মধ্যযুগ (১২০১ খ্রি.–১৮০০ খ্রি.)
- আধুনিক যুগ (১৮০১ খ্রি.–বর্তমান কাল)
ক) আদিযুগ –
১) এই যুগে সংস্কৃত, প্রাকৃত, ও অবহটঠ সাহিত্য রীতি প্রচলিত ছিল বলে জানা যায়।
২) ত্রয়োদশ শতাব্দীতে তুর্কি আক্রমণের বহু পূর্বেই বাঙালিরা একটি বিশেষ জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
৩) বাংলা ভাষায় রচিত সাহিত্যের আদিতম নিদর্শন হল চর্যাপদ।
৫) খ্রিষ্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে রচিত চর্যা পদাবলি ছিল সহজিয়া বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যদের সাধনসংগীত।
৬) বাংলার পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্তে প্রাচীন ও নব্য প্রস্তরযুগ এবং তাম্রযুগের নিদর্শন পাওয়া গেছে বলে ঐতিহাসিকেরা উল্লেখ করেছেন।
৭) সমগ্র বাঙালি জনগোষ্ঠীকে দু ভাগে ভাগ করা যায় : ক. প্রাক-আর্য বা অনার্য নরগোষ্ঠী এবং খ. আর্য নরগোষ্ঠী।
৮) আর্যপূর্ব জনগোষ্ঠী মূলত নেগ্রিটো, অস্ট্রিক, দ্রাবিড় ও ভোটচীনীয়—এই চার শাখায় বিভক্ত ছিল ।
৯) অস্ট্রো-এশিয়াটিক বা অস্ট্রিক গোষ্ঠী থেকে বাঙালি জাতির প্রধান অংশ গড়ে উঠেছে বলে গবেষকগণ ধারণা করেন।
১০) কেউ কেউ প্রাচীন যুগকে আরও কয়টি নাম দিয়েছেন। জেমনঃ আদ্যকাল, গীতিকবিতার যুগ, হিন্দু-বৌদ্ধ যুগ, আদি যুগ, প্রাক-তুর্কি যুগ, গৌড় যুগ, ইত্যাদি।
১১) বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগের একমাত্র নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক নিদর্শন চর্যাপদ।
১২) বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যদের রচিত চর্যাপদগুলো সম্পর্কে ১৯০৭ সালের আগে কোন তথ্যই জানা ছিল।
১৩) ১৮৮২ সালে প্রকাশিত Sanskrit Buddhist Literature in Nepal গ্রন্থে রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্র সর্বপ্রথম নেপালের বৌদ্ধতান্ত্রিক সাহিত্যের কথা প্রকাশ করেন।
১৪) চর্যাপদ ১৯০৭ সালে নেপালের রাজগ্রন্থাগার থেকে শ্রী মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আবিষ্কার করেন।
১৫) ১৯১৬ সালে তারই সম্পাদনায় ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ’ থেকে বই আকারে বের হয়। তখন এটির নামকরণ করা হয়েছিলো ‘হাজার বছরের পুরাণ বাংলা ভাষার রচিত বৌদ্ধ গান ও দোহা’।
১৬) চর্যাপদ কে সাধারণত গানের সংকলন হিসেবেই ধরা হয়।
১৭) চর্যাপদ সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় ১৯১৬ সালে। এটি কলকাতার বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে প্রকাশিত হয়।
১৮) এ পর্যন্ত চর্যাপদের আবিষ্কৃত পদ সংখ্যা ধরা হয় – সাড়ে ৪৬টি।
১৯) বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনযুগের একমাত্র নিদর্শনের নাম হল-চর্যাচর্যবিনিশ্চয় বা চর্যাগীতিকোষ বা চর্যাগীতি বা চর্যাপদ।
২০) চর্যাপদ এর রচয়িতাগণ ছিলেন দ্বাদশ শতাব্দীর।
২১) চর্যাগুলো যারা রচনা করেন তাদেরকে বৌদ্ধ সহজিয়া বলা হয়।
২২) চর্যাপদের রচয়িতা নিয়ে মতভেদ আছে। তবে বেশিরভাগ মনে করেন-২৩ জন। কেউ কেউ মনে করেন ২৪ জন।
২৩) চর্যাপদের মোট পদ রয়েছে-৫০টি। কারো মতে ৫১টি।
২৪) চর্যাপদের আদি কবি লুইপা এর প্রথম পদটি হল-” কাআ তরুবর পাঞ্চ বি ডাল, চঞ্চল চীএ পইঠা কাল”।
২৫) চর্যাপদের ভাষা যে বাংলা তা প্রথম প্রমাণ করেন ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়।